কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফয়জুল আযীম নোমানের বিরুদ্ধে ভয়াবহ মামলা, গ্রেফতার সহ রিমান্ড বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। মামলা, গ্রেফতার বাণিজ্য সহ নানা অভিযোগে একমাস ২৮ দিনের মাথায় এক আদেশে গতকাল রোববার তাকে চট্টগ্রাম রেঞ্জে সংযুক্ত করা হয়েছে। এই নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে। অনেকেই ওসির বাণিজ্যের বিষয় নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছে। গতকাল একদিনেই ওসি নোমানের অপকর্মের বর্ণনা দিয়েছেন ডজন খানেক ভুক্তভোগী।
প্রাপ্ততথ্য মতে, ছাত্র -আন্দোলনের তোপের মুখে স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর গত ৫ আগস্ট খেকে রোববার পর্যন্ত কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ৮ টি মামলা রুজু করা হয়। এর মধ্যে একটি মামলার বাদি পুলিশ। অন্য ৭ টি মামলার বাদি ছাত্র ও বিএনপির নেতাকর্মী। ওইসব দায়েরকৃত মামলায় ওসির বিরুদ্ধে বিস্তর বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ওসি নোমান যোগদানের পর ৮৭ জনকে গ্রেফতার করেছে। এর মধ্যে এজাহারনামীয় ৩ জন ও ৮৪ জনকে সন্নিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেফতার করেন। অভিযোগ রয়েছে, গ্রেফতারের পর বেশির ভাগই আসামির কাছ থেকে মোটাঅংকের বাণিজ্যের। জনশ্রুতি রয়েছে, লাখের নিচে টাকা নিতেন না ওসি নোমান। গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে থানায় দায়েরকৃত সকল মামলায় গ্রেফতার দেখানোর ভয়, রিমান্ডে এনে নির্যাতন সহ নানা হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি তিনি কথা কথায় নিজেকেই ছাত্রদলের ক্যাডার দাবি করতেন। বিএনপি, ছাত্রদলের কিছু কেন্দ্রীয় নেতার নাম ভাঙ্গিয়ে সাধারণ মানুষকে ধমকাতেন। তার ধমকানি থেকে রেহাই পায়নি খোদ বিএনপির সিনিয়র অনেকেই। অনেকটা বেপরোয়া ছিলেন ওসি নোমান। বাণিজ্যের পাশাপাশি তার বিরুদ্ধে গভীর রাতে 'রঙ্গিন' পানিতে ডুবে থাকারও অভিযোগ রয়েছে। সুন্দরী রমনী প্রতি আসক্ত ছিলেন ওসি নোমান।
গতকাল রোববার চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মো. আহসান হাবিব পলাশের সাক্ষরিত প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ ফয়জুল আযীমকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত চট্টগ্রাম ডিআইজি কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হলো। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ।
সূত্র মতে, কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ওসি একটি বলয় তৈরি করেন। যোগদানের পর কক্সবাজার জেলা শহরে রাত হলে বিভিন্ন টিম তৈরি করে গণগ্রেফতার করাতেন। সকালে বসাতেন বাণিজ্যের হাট। সূত্র মতে, তিনি থানার কোন অফিসারের প্রতি তার আস্তা ছিলনা। অফিসাররা আসামি ধরে আনলেও তিনি একাই বাণিজ্য করতেন। যার কারনে অফিসারদের মাঝে ক্ষোভ তৈরি হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, থানার সেকেন্ড অফিসার জামাল চৌধুরীই ছিলেন ওসি নোমানের আস্তাভাজন। তাকে দিয়ে সব বাণিজ্য সামলাতেন ওসি। এছাড়া ওসি কক্সবাজারের হোটেল মোটেল জোনের সকল অপরাধের আস্তানা থেকে মাসোহারা তোলার অভিযোগ রয়েছে। গত দুই মাসে তার নানা অপকর্মের কারনে সদর মডেল থানা থেকে তদবির করে অন্যত্রে বদলি হয়েছেন অনেক এসআই, এএসআই সহ কনস্টেবলরা।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের সূত্র মতে, আজ সোমবার ওসি ফয়জুল আযীম নোমান কক্সবাজার ত্যাগ করার কথা রয়েছে।।
অভিযোগের প্রসঙ্গে কক্সবাজার সদর মডেল থানার প্রত্যাহারকৃত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফয়জুল আযীম নোমানের ব্যক্তিগত নাম্বার ও সরকারি নাম্বারে একাধিক যোগাযোগ করা হলেও তিনি সাড়া না দেয়ায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, ফয়জুল আযীম গণ-অভ্যুত্থানের পর গত ১৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ওসি হিসাবে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকে ঘুষ গ্রহণ ও মামলা বাণিজ্যসহ নানা অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে। এই নিয়ে নানা সমালোচনা মুখের পড়েন তিনি।